Kilbil Society Review: মানুষের শরীর—সমাজে এ যেন এক ট্যাবু। যতই আধুনিক হই না কেন, শরীরকে ঘিরে এখনও রয়েছে হাজারো কুসংস্কার, কলঙ্ক আর বিধিনিষেধ। আর সেই বাস্তবতাকে সামনে এনে সৃজিত মুখোপাধ্যায় তৈরি করলেন এক সাহসী, চিন্তাশীল ছবি—‘কিলবিল সোসাইটি’। এটি শুধুই একটি সিনেমা নয়, বরং সমাজের মানসিকতা নিয়ে এক নির্মম প্রশ্ন।
Kilbil Society Review: গল্পের মধ্যে প্রেম আর প্রচণ্ড প্রাসঙ্গিকতা
গল্পের কেন্দ্রে রয়েছেন পূর্ণা আইচ (কৌশানি মুখোপাধ্যায়), এক উঠতি অভিনেত্রী এবং সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচিত মুখ। তার জীবনে আলো যেমন আছে, তেমনি রয়েছে অন্ধকার দিকও। প্রেমিকের প্রতারণায় এক ঝটকায় তার ব্যক্তিগত মুহূর্ত ভাইরাল হয়ে পড়ে। সমাজ? পরিবার? কেউ পাশে থাকে না। চোখ রাঙানির বদলে মেলে বিচারের দৃষ্টিতে তাকানো, অপমান আর বিচ্ছিন্নতা।
ঠিক সেই সময়ে প্রবেশ ঘটল মৃত্যুঞ্জয় কর (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়)-এর, যিনি মৃত্যুর আনন্দ শেখান, কিলবিল সোসাইটি নামক এক ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। তাদের ট্যাগলাইন— “মারব এখানে, ইনভয়েস যাবে ওখানে!”—জীবনের শেষ পর্বকে এক অনন্য অভিজ্ঞতায় পরিণত করে।
মৃত্যুর মাঝে জন্ম নেয় ভালোবাসা
পূর্ণা যখন জীবনের সব আশা ছেড়ে দিয়েছেন, ঠিক তখনই মৃত্যুঞ্জয় তার জীবনে আলোর রেখা হয়ে এলেন। ধীরে ধীরে গড়ে উঠল এক অদ্ভুত সম্পর্ক। মৃত্যুর মাঝেও জন্ম নিল নতুন বেঁচে থাকার ইচ্ছা, নতুন প্রেম।
সৃজিত এখানে এক গভীর বার্তা দিয়েছেন—মৃত্যু নয়, বাঁচার মধ্যেই মুক্তি। শরীরের অপমান নয়, আত্মার সম্মানটাই শেষ কথা।
Kilbil Society Review: প্রেমে হিংসা নয়, শ্রদ্ধা দরকার
ছবির মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন পরিচালক:
- প্রেমে হিংসা ও ঈর্ষার স্থান নেই
- শরীর ক্ষণস্থায়ী, মন এবং আত্মাই আসল
- সমাজের উচিত, অপমান নয়—সহানুভূতি দেখানো
- মৃত্যু শেষ নয়, যদি ভালোবাসা থাকে জীবনের শেষে
এই গভীর বার্তাগুলোকে খুব সূক্ষ্মভাবে সিনেমার প্রতিটি অধ্যায়ে ঢুকিয়ে দিয়েছেন তিনি।
অভিনয়ের পর্যালোচনা: কার কেমন পারফরম্যান্স?
- পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়: একদম নিজের ছন্দে। তাঁর সংলাপ, চোখের অভিব্যক্তি, আর ব্যতিক্রমী চরিত্র ফুটিয়ে তোলার দক্ষতা যেন প্রতিটি দৃশ্যেকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
- কৌশানি মুখোপাধ্যায়: চমকপ্রদ উন্নতি! কিছু দৃশ্যে তিনি দুর্দান্ত, কিছু ক্ষেত্রে আরও গভীরতা আনলে ভালো হত। তবে তার ইমোশনাল দৃশ্যগুলো সত্যিই মনে দাগ কাটে।
- অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়: ছোট চরিত্র, কিন্তু চমৎকার প্রভাবশালী। তাঁর সংলাপ অনেক দর্শকের মনে ঘৃণা জাগাবে—সেটাই তো আসল সাফল্য!
- বিশ্বনাথ বসু: যেন ছবির আত্মা। হালকা রসিকতা আর সমাজের অন্ধকার বাস্তবতার সংমিশ্রণে তাঁর অভিনয় নিখুঁত।
সিনেমার ভাষা ও শব্দচয়ন: একটু কটুকথা, কিন্তু দরকার ছিল
চিত্রনাট্যে কিছু জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে কিছু খোলামেলা শব্দ, যা কিছু দর্শকের অস্বস্তির কারণ হতে পারে। কিন্তু প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, এটাই বাস্তবতা তুলে ধরার সাহসী চিত্র।
‘Kilbil Society’ Movie Verdict: দেখবেন কেন?
এই সিনেমা একবার নয়, বারবার দেখার মতো। কারণ এটি আমাদের চেনা সমাজকে এক নতুন আয়নায় দেখায়। প্রেম, আত্মহত্যা, সামাজিক অবহেলা—সব কিছুই মিশে এক অসাধারণ গল্প গড়ে তুলেছে।
রেটিং: ⭐⭐⭐✨ (৪/৫)
পরিচালক: সৃজিত মুখোপাধ্যায়
অভিনয়ে: পরমব্রত, কৌশানি, অনিন্দ্য, বিশ্বনাথ, সন্দীপ্তা সেন
ধরন: সামাজিক, থ্রিলার, ডার্ক রোমান্স
FAQs – কিলবিল সোসাইটি নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন
সিনেমাটির প্রধান থিম কী?
সামাজিক বিচার, শরীর নিয়ে ট্যাবু, প্রেমে হিংসা এবং জীবনের শেষ অধ্যায়ে মুক্তির সন্ধান।
ছবিটি কি বাস্তব ঘটনার অনুপ্রেরণায়?
না, তবে বর্তমান সমাজের বাস্তব চিত্রই এই সিনেমার অনুপ্রেরণা।
পূর্ণা চরিত্রে কৌশানি কেমন অভিনয় করেছেন?
তিনি অনেক উন্নতি করেছেন, কিছু দৃশ্যে দুর্দান্ত, কিছু জায়গায় আরও ভালো হতে পারতেন।
ছবিতে মৃত্যুর ভাবনাকে কেমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে?
এখানে মৃত্যুকে ভয়ের নয়, বরং মুক্তির এবং উপলব্ধির রূপে দেখানো হয়েছে।
Read More