ভারতের অসংগঠিত শ্রমিকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার চালু করেছে ই-শ্রম কার্ড (E Shram Card)। এই কার্ডের মাধ্যমে শ্রমিকরা মাসে ৩০০০ টাকা পেনশন, দুর্ঘটনা বীমা, বাড়ি নির্মাণে সহায়তা এবং শিক্ষা ভাতার মতো সুবিধা পাবেন। ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে ২০ কোটির বেশি শ্রমিক এই প্রকল্পে নিবন্ধিত হয়েছেন। এই নিবন্ধে ই-শ্রম কার্ডের সুবিধা, আবেদনের পদ্ধতি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
E Shram Card কী? কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
ই-শ্রম কার্ড হলো শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত একটি জাতীয় ডিজিটাল ডেটাবেস। মূলত দিনমজুর, রিকশাচালক, গৃহকর্মী, নির্মাণশ্রমিকের মতো অসংগঠিত খাতের শ্রমিকদের জন্য এই কার্ড তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার শ্রমিকদের একটি স্বীকৃত পরিচয়পত্র দিচ্ছেন, যা তাদের বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পাওয়ার দরজা খুলে দেবে।
প্রধান উদ্দেশ্য:
- অসংগঠিত শ্রমিকদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
- দুর্ঘটনা বা বার্ধক্যজনিত সমস্যায় আর্থিক সহায়তা প্রদান।
- কল্যাণমূলক প্রকল্পে সরাসরি সুবিধা পৌঁছে দেওয়া।
ই-শ্রম কার্ডের সুবিধাসমূহ
১. মাসিক ৩০০০ টাকা পেনশন:
- ৬০ বছর বয়সে পৌঁছালে কার্ডধারী মাসে ৩০০০ টাকা পেনশন পাবেন।
২. দুর্ঘটনা বীমা:
- কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে পরিবার পাবে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ।
- স্থায়ী অঙ্গহানি ঘটলে ১ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা।
৩. গৃহনির্মাণ সহায়তা:
- গৃহহীন শ্রমিকদের পিএম আবাস যোজনা (PM Awas Yojana) এর আওতায় আর্থিক সুবিধা।
৪. গর্ভবতী মহিলাদের সহায়তা:
- গর্ভাবস্থায় কাজ করতে অসমর্থ মহিলারা ৫০০০ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য পাবেন।
৫. শিক্ষা বৃত্তি:
- কার্ডধারীদের সন্তানেরা স্কুল ও কলেজে বৃত্তির জন্য যোগ্য হবেন।
ই-শ্রম কার্ডের জন্য আবেদনের যোগ্যতা
- বয়স: ১৬ থেকে ৫৯ বছর।
- পেশা: কৃষি, নির্মাণ, গার্মেন্টস, পরিবহনের মতো অসংগঠিত খাতের শ্রমিক।
- আয়: মাসিক আয় ১৫,০০০ টাকার কম এবং আয়করদাতা নন।
- অন্যান্য শর্ত: EPFO বা ESIC-এর সদস্য হলে আবেদন করা যাবে না।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি
- আধার কার্ড (Aadhaar Card)
- প্যান কার্ড (PAN Card)
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ (আধার-লিঙ্কড)
- মোবাইল নম্বর (আধারের সাথে রেজিস্টার্ড)
ই-শ্রম কার্ডের জন্য অনলাইন আবেদন পদ্ধতি
১. অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান: শ্রম মন্ত্রণালয়ের ই-শ্রম পোর্টাল
২. নতুন নিবন্ধন (New Registration): “শ্রমিক নিবন্ধন” অপশনে ক্লিক করুন।
৩. মোবাইল নম্বর যাচাই: আধার-লিঙ্কড নম্বর দিয়ে OTP ভেরিফাই করুন।
৪. ব্যক্তিগত তথ্য দিন: নাম, বয়স, পেশা, পরিবারের বিবরণ ইত্যাদি পূরণ করুন।
৫. ডকুমেন্ট আপলোড: প্রয়োজনীয় নথি স্ক্যান করে জমা দিন।
৬. আবেদন নিশ্চিত করুন: শেষে রেজিস্ট্রেশন নম্বর নোট করুন।
নোট: আবেদনের পর স্ট্যাটাস চেক করতে ওয়েবসাইটে লগইন করুন। কার্ড অনুমোদিত হলে ডাউনলোড করুন।
E Shram Card নিয়ে সাধারণ প্রশ্নোত্তর
Q: কার্ড না পেলে কী করবেন?
A: ৬০ দিনের মধ্যে স্থানীয় শ্রম অধিকার কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।
Q: পরিবারের একাধিক সদস্য আবেদন করতে পারবেন?
A: হ্যাঁ, প্রত্যেক যোগ্য শ্রমিক আলাদাভাবে আবেদন করতে পারবেন।
Q: পেনশনের টাকা কখন পাবেন?
A: ৬০ বছর পূর্তির পর মাসিক ৩০০০ টাকা সরাসরি ব্যাংকে জমা হবে।
E Shram Card: ভবিষ্যতের নিরাপত্তার চাবিকাঠি
ই-শ্রম কার্ড কেবল একটি পরিচয়পত্র নয়, এটি অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য আর্থিক সুরক্ষার বীমা পলিসি। দুর্ঘটনা, বার্ধক্য বা অর্থসংকটে এই কার্ডই হতে পারে আপনার পরিবারের রক্ষাকবচ। তাই সময় নষ্ট না করে আজই আবেদন করুন এবং সরকারের এই যুগোপযোগী প্রকল্পের সুবিধা নিন।
👉 এখানে ক্লিক করে ই-শ্রম কার্ডের জন্য আবেদন করুন
মনে রাখুন: ই-শ্রম কার্ড পেলে সরকারি সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি আপনার কর্মসংস্থানের তথ্য জাতীয় ডেটাবেসে সংরক্ষিত হবে, যা ভবিষ্যতে চাকরি বা ঋণের সুযোগ তৈরি করবে। আজই আপনার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করুন!